Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- জন্মান্ধ হয়েও জলের নীচে সমস্ত কিছু স্পষ্ট দেখতে পান ভুল্লু ! আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি ৷ বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা ভুল্লু সাহনির পরিচিতি ‘জলযোদ্ধা’ হিসেবে ৷
সম্প্রতি, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এই বিশেষ ক্ষমতার জন্য ভুল্লুকে একটি প্রশংসাপত্র দিয়ে সম্মানিত করেছেন । জলের নীচে দেখার ক্ষমতাসম্পন্ন অন্ধ ভুল্লু সাহানি এখনও পর্যন্ত 14 জনের জীবন বাঁচিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে, তা সম্ভব ? চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনটা সম্ভব ৷ কারণ বাতাস ও জলের আপেক্ষিক সূচক আলাদা ৷
অন্ধ ভুল্লুর আশ্চর্য ক্ষমতা :
সমস্তিপুরের পাটোরি ব্লকের ডুমডুমা গ্রামের বাসিন্দা ভুল্লু সাহনি ৷ তাঁর নাম আজ সমগ্র বিহারে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে । জন্ম থেকে অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও, জলের তলায় স্পষ্ট দেখতে পাওয়ার অনন্য ক্ষমতা তাঁকে রাজ্যে বিশেষ করে তুলেছে । এখনও পর্যন্ত তিনি 14 জনকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন ৷ এছাড়াও নদী ও পুকুর থেকে 13 জনের দেহ তুলে এনেছেন।
ভুল্লুর কথায়,”বায়া নামে একটি নদী আছে, আমরা সেখান থেকে অনেকজনকে উদ্ধার করেছি । আমি এমনিতে দেখতে পাই না ৷ কিন্তু জলে ডুব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি সবকিছু দেখতে পাই । আমার চোখ জ্বলতে থাকে।”
মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা সম্মানিত ভুল্লু :
অসাধারণ সেবার পরিপ্রেক্ষিতে, বিহার পুলিশ সপ্তাহের কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সম্মানিত করেছেন ভুল্লুকে । একটি প্রশংসাপত্র এবং 10 হাজার টাকা নগদ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয় তাঁকে ।
আরও পড়ুন:- সুখবর ! সরাসরি ইন্টারভিউর মাধ্যমে স্টেট ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! শীঘ্রই আবেদন করুন
এমনিতে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকেও দেখতে পান না ভুল্লু । চোখের সামনে শুধু অন্ধকার দেখেন । কিন্তু জলের ভিতরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবকিছু স্পষ্ট দেখতে শুরু করেন । এই অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি নদী ও পুকুরে ডুবে যাওয়া মানুষদের বাঁচান। এছাড়াও, যদি কেউ ডুবে মারা যান, তাঁর দেহ জলের তলা থেকে খুঁজে আনতে পারেন তিনি।
ভুল্লুর পরিবার বংশপরম্পরায় বায়া নদীর তীরে বসবাস করে আসছে । নদী-পুকুরে সাঁতার কাটা তাদের কাছে রাস্তায় হাঁটার মতোই সহজ । ভুল্লুর দাবি, এখনও পর্যন্ত তিনি 14 জনের জীবন বাঁচিয়েছেন এবং 13 জনের দেহ উদ্ধার করেছেন ।
সমাজসেবামূলক কাজ করা ভুল্লুর জীবনসংগ্রামে পূর্ণ । তিনি ভূজা (ঝালমুড়ি ধরনের মিক্সচার খাবার যা বিহারে ভূজা নামে প্রসিদ্ধ) বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন । যখন কোথাও দেহ সরানোর প্রয়োজন হয়, তখন সেই কাজের বিনিময়ে ভুল্লু বকশিশ হিসেবে কিছু পান ৷ এছাড়াও, ভুল্লু সাহানির বাঁশি বাজানোর খুব শখ । পরিবারে বাবা-মা, ভাই এবং ভগ্নিপতি রয়েছেন । ভুল্লুরও বিয়ে হয়েছিল ৷ কিন্তু কিছুদিন পর তাঁর স্ত্রী ছেড়ে চলে যান ।
সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন :
ভুল্লু জানান যে, তিনি দুই মিনিট জলের নীচে থাকতে পারেন । মুখ্যমন্ত্রীর থেকে সম্মান পাওয়ার পরেও ভুল্লু দুঃখিত যে, তিনি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না । গৃহায়ন ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন না । এই বিষয়ে তিনি সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন।
ভুল্লুর বাবা কৈলু সাহনি বলেন,”আমি আমার ছেলের জন্য গর্বিত ৷ চার ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে মেজ হল ভুল্লু । বাড়ির সামনে ভূজা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে । ছেলের জন্য গর্বিত কারণ আজ সমাজের ক্ষেত্রে নিজের জন্য একটি আলাদা পরিচয় তৈরি করেছে । এখনও পর্যন্ত জলে ডুবে যাওয়া 14 জনের জীবন বাঁচিয়েছে ভুল্লু । এখানে-সেখানে ডুবে যাওয়া মানুষদের উদ্ধার করে । তবে তাতেও ওর তেমন কোনও লাভ হয় না । কোনও সরকারি সহায়তা পায় না ৷”
গ্রামবাসীদের বক্তব্য :
গ্রামবাসী অরবিন্দ সাহনি বলেন, “ভুল্লু সাহনি মানুষকে সাহায্য করেন, কিন্তু সরকার তাঁকে সাহায্য করে না । তিনি এমনিতে দেখতে পান না ৷ কিন্তু জলের তলার জিনিস সব দেখতে পান ৷ তাই কেউ ডুবে যাওয়ার পর মৃতদেহ খুঁজে না পাওয়া গেলে ভুল্লুকে ডাকা হয় ৷ তিনিই জলের তলা থেকে মৃতদেহ বের করে আনেন ৷ তিনি পুকুর, ড্রেন এবং নদী থেকে মানুষকে বাঁচান । তার নাম রেশন কার্ডে আছে কিন্তু তিনি রেশন পান না । তবুও তিনি মানুষকে সাহায্য করেন ।”
নীতীশ নামে আরেক গ্রামবাসী জানান, ভুল্লু সাহনি ডুবে যাওয়া অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন । তিনি জলের নীচ থেকে দেহও তুলে এনেছেন । সরকারের উচিত তাঁকে সমর্থন করা । তাঁর রেশন কার্ড এবং ইন্দিরা আবাসনের সুবিধা পাওয়া উচিত ।
ডাক্তারের বক্তব্য :
ভুল্লুর এহেন দৃষ্টিভঙ্গির কারণ হিসেবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,”রোগীর অবস্থা দেখে তবেই কিছু বলা যাবে। বাতাসের আপেক্ষিক সূচক আলাদা এবং জলের আপেক্ষিক সূচক আলাদা । এর ফলে, তিনি হয়ত কিছুটা সুবিধা পাচ্ছেন ।”
আরও পড়ুন:- একটাই বাড়িতে বাস করেন গোটা শহরের মানুষ, জানুন কেন এমন সিস্টেম
আরও পড়ুন:- যাদবপুরের পড়ুয়াদের ‘কুকুরের’ সঙ্গে তুলনা কল্যাণের, জানুন বিস্তারিত