Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- EPIC নম্বর কারচুপির কারণেই এত ‘ভূতুড়ে ভোটার’, অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। এই নিয়ে পাল্টা ব্যাখ্যা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ECI)। তারা জানিয়েছিল, কিছু প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এমনটা হতে পারে। তবে সেই ব্যাখ্যায় মোটেও সন্তুষ্ট নয় ঘাসফুল শিবির। তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) দাবি, এটিকে শুধুমাত্র প্রশাসনিক ত্রুটি বলে ধরা চলবে না। এটি আদতে ‘নির্বাচনী বিধির লঙ্ঘন’।
TMC-র দাবি, ECI-র নিয়মাবলীর IX অধ্যায়ে লেখা আছে যে, প্রতিটি EPIC নম্বরের প্রথম তিনটি অক্ষর, কোনও নির্দিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের জন্যই ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, সেই প্রথম ৩ অক্ষরে অন্য কোনও বিধানসভায় এপিক নম্বর থাকা অসম্ভব। অর্থাৎ, একই রাজ্যের বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রেও এই প্রথম তিনটি অক্ষর কিছুতেই এক হতে পারে না। এই তিন অক্ষরকে বলা হয়, ‘Functional Unique Serial Number (FUSN)’। তৃণমূূলের দাবি, ঠিক এই কারণেই দু’টি স্থানের EPIC নম্বর মিলে যাওয়া অসম্ভব।
আরও পড়ুন:- সুখবর ! সরাসরি ইন্টারভিউর মাধ্যমে স্টেট ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! শীঘ্রই আবেদন করুন
ECI-এর দাবি ও TMC-র পাল্টা যুক্তি
১. অ্যালফানিউমেরিক সিরিজ রিপিট হচ্ছে
ECI-এর দাবি: কিছু রাজ্যে একই অ্যালফানিউমেরিক সিরিজ ব্যবহার করার কারণেই EPIC নম্বরের মিল হচ্ছে।
TMC পাল্টা যা বলছে: EPIC নম্বরের প্রথম তিনটি অক্ষর নির্দিষ্ট একটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্যই বরাদ্দ। তাই দুইটি ভিন্ন রাজ্যের ভোটারের EPIC নম্বর এক হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা, গুজরাটের ভোটারদের EPIC নম্বর এক হলে সেটা ‘নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত’, সেই প্রশ্ন তুলেছে TMC।
২. ভোটিংয়ে নিষেধাজ্ঞা এবং ফটো ইলেক্টোরাল রোল
ECI-এর দাবি: EPIC নম্বর যদি মেলেও, সেক্ষেত্রেও একজন ভোটার শুধুমাত্র নিজের নির্দিষ্ট কেন্দ্রেই ভোট দিতে পারেন। তাই এটি ভোট প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে না।
TMC-র যুক্তি: ফটো ইলেক্টোরাল রোলে প্রতিটি EPIC নম্বর নির্দিষ্ট ভোটারের ছবির সঙ্গে যুক্ত। যদি একাধিক রাজ্যে একই EPIC নম্বর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ছবি থাকে, তাহলে ভোটের সময় ছবি না মিললে সেক্ষেত্রে ভোটার তাঁর ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। অর্থাৎ, কোনও ভোটারের অজান্তে এমনটা হলে তিনি নিজেই আর ভোট দিতে পারবেন না। এতে তাঁর ভোটাধিকার চলে যাবে। EPIC নম্বর মিলে যাওয়ায় কারচুপি না হলেও, এই ভোটাধিকার নষ্ট হওয়ার বিষয়টি উপেক্ষা করা যায় না। আর সেই কারণেই এপিক নম্বরে মিল কাম্য নয়।
৩. EPIC নম্বর তৈরিতে সফটওয়্যারের ত্রুটি
ECI-এর দাবি: অ্যালফানিউমেরিক কোড তৈরির সময় সফটওয়্যারের ত্রুটির কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে।
TMC-র পাল্টা যুক্তি: ECI-এর সফটওয়্যারে প্রতিটি ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত EPIC নম্বর ট্র্যাক করা হয়। এর ফলে একজন নির্দিষ্ট ভোটারের সঙ্গে একটি এপিক নম্বরই স্থায়ীভাবে যুক্ত থাকে। ফলে খুব সহজেই একই EPIC নম্বর কিছুতেই আর রিপিট হয় না। সফটওয়্যার ত্রুটির যুক্তিকেই প্রশ্ন করেছে তৃণমূল।
TMC-র অভিযোগ: ইচ্ছাকৃত ভোটার দমন
TMC-এর দাবি, এই EPIC নম্বরের মিলের বিষয়টি ইচ্ছাকৃত। এর মাধ্যমে মূলত অ-বিজেপিশাসিত স্থানে ভোটার দমনের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেখছে ঘাসফুল শিবির।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৭ ফেব্রুয়ারি BJP-র বিরুদ্ধে সরাসরি ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ তোলেন।
ECI-এর অবস্থান ও TMC-র পরবর্তী পদক্ষেপ
ECI জানিয়েছে, এই EPIC বিভ্রাট যখন হয়েছে, তখনও ERONET সিস্টেম আসেনি। সেই সময়ে ম্যানুয়ালি রাজ্যভিত্তিকভাবে ভোটার তালিকা সংরক্ষণ করা হত। ERONET চালুর পর কেন্দ্রীয় ডেটাবেসের মাধ্যমে পুরোটা নিয়ন্ত্রিত। ফলে সেই সমস্যা আর হবে না বলে আশাবাদী নির্বাচন কমিশন।
যদিও এই জবাবে মোটেও সন্তুষ্ট নয় TMC। আগামী সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাল্টা নথি পেশের পরিকল্পনা করছে তারা। সেই সঙ্গে সংসদেও বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে জানা গিয়েছে। শুধু তৃণমূলই নয়, এর পাশাপাশি, INDIA জোটের পাঁচটি দলও (Congress বাদে) TMC-র সঙ্গে এই ইস্যুতে আলোচনায় বসেছে।
২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে রাজ্যে গুরুতর রাজনৈতিক তরজার আবহ তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:- একটাই বাড়িতে বাস করেন গোটা শহরের মানুষ, জানুন কেন এমন সিস্টেম
আরও পড়ুন:- যাদবপুরের পড়ুয়াদের ‘কুকুরের’ সঙ্গে তুলনা কল্যাণের, জানুন বিস্তারিত