Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- গত তিন বছর ধরে ভারতের শেয়ারবাজার ছিল স্বপ্নের মতো। কোভিড পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছর ছিল রেকর্ড-ব্রেকিং। তবে ভারতের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, শেয়ারবাজার টানা চার বছর ধরে বুলিশ থাকে না। সাধারণত চতুর্থ বছরে বাজারে মন্দার ছায়া নামে। আর এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাজারে টানা পতন চলছে। সোমবার সেনসেক্স ২১৭ পয়েন্ট পড়ে ৭৪,১১৫-তে বন্ধ হয়েছে, আর নিফটি ৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২২,৪৬০-তে। বাজার বিশেষজ্ঞ সৌরভ মুখার্জি জানিয়েছেন, এই মন্দা সাময়িক নাকি দীর্ঘমেয়াদী হবে, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতির ওপর। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিগুলি যদি ডলারের মূল্য আরও বাড়িয়ে দেয়, তাহলে ভারতের শেয়ারবাজার আরও ধাক্কা খেতে পারে।
বাজারের পতনের পিছনে কী কারণ?
* টানা তিন বছর প্রবৃদ্ধির পর স্বাভাবিক সংশোধন (Market Correction)
•ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নগদের ঘাটতি (Liquidity Crisis)
* বিশ্ববাজারে ডলারের আধিপত্য বৃদ্ধি ও তার প্রভাব
* ট্রাম্পের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নীতি (যদি তিনি প্রেসিডেন্ট হন)
ব্যাংকিং সেক্টরের সংকট: ক্যাশ সংকট বাড়ছে
মুখার্জি ব্যাখ্যা করেছেন যে, ভারতের ব্যাংকগুলোর ক্যাশ প্রবাহে টান পড়ছে, যার ফলে ঋণদানের হার (Loan Growth) কমছে। এর কারণ, অনেকেই ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে সরাসরি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন, যা ব্যাংকের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার কারণ হতে পারে।
এই পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তাহলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাবে, যার ফলে কোম্পানিগুলোর বৃদ্ধি থমকে যেতে পারে। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে ভারতীয় অর্থনীতিতে।
আরও পড়ুন:- কালো জল: কেন ক্রমে বাড়ছে এর জনপ্রিয়তা ? জানতে বিস্তারিত পড়ুন
২০১৬ নাকি ২০১২-১৩? কোন ধরনের মন্দার সম্ভাবনা?
ভারত অতীতে দুই ধরনের মন্দার সম্মুখীন হয়েছে—
১) হালকা মন্দা (Mild Recession): ২০১৬ সালের মতো, যখন বাজার কয়েক মাস নিম্নগামী ছিল, কিন্তু দ্রুত রিকভারি করতে পারবে।
২) কঠিন মন্দা (Painful Recession): ২০১২-১৩ সালের মতো, যখন RBI উচ্চ সুদের হার বজায় রাখতে বাধ্য হয়েছিল, যা বাজারের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
মুখার্জি মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি মূলত ২০১৬ সালের মতোই হতে পারে, তবে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি যদি ডলারের মূল্য আরও বাড়িয়ে দেয়, তাহলে তা ২০১২-১৩ সালের মতো ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে।
ডলারের দাম বাড়লে কী হবে?
ডলারের দাম বৃদ্ধি মানে RBI-র জন্য চ্যালেঞ্জ। সাধারণত, বাজার দুর্বল হলে RBI সুদের হার কমিয়ে অর্থনৈতিক গতি ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ডলার শক্তিশালী হলে RBI-কে সুদের হার বাড়াতে হতে পারে, যা বাজারের জন্য নেতিবাচক সংকেত।মুখার্জির মতে, যদি ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হন এবং আমেরিকা অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক (Tariff) আরোপ করে, তাহলে ডলারের মূল্য আরও বাড়বে এবং ভারতের বাজার আরও গভীর মন্দায় পড়বে।
বাজার কতটা পড়েছে?
* BSE সেনসেক্স অক্টোবর ২০২৪ থেকে ১৩% কমে গেছে।
* মিড-ক্যাপ ও স্মল-ক্যাপ শেয়ার যথাক্রমে ২২% ও ২৫% পর্যন্ত কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন স্তরে পৌঁছে গিয়েছে, এবং এখান থেকে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সামনের কয়েক মাসে আরও পতন হলে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে।
তাহলে বিনিয়োগকারীরা কী করবেন?
* আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করবেন না।
* সাবধানে স্টক বাছাই করুন, বিশেষ করে বড় কোম্পানিতে (Blue-chip stocks)।
* লং-টার্ম দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন।
* সাবধানতার সঙ্গে বাজার পর্যবেক্ষণ করুন, বিশেষ করে ট্রাম্পের সম্ভাব্য নীতির দিকে নজর রাখুন।
ভারতীয় শেয়ারবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ২০১৬ সালের মতো মৃদু সংশোধন হবে, নাকি ২০১২-১৩ সালের মতো ভয়ানক মন্দা আসবে, তা নির্ভর করছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও বাজারকে চাঙ্গা রাখতে RBI গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আপনার মতামত কী?
আপনার মতে, বাজার কতদিনের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পারে?
আরও পড়ুন:- বিদ্যুৎ দপ্তরে নতুন করে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! আবেদন পদ্ধতি সহ বিস্তারিত দেখেনিন