Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ভারতে স্থূলতার হার ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী, এবং ল্যানসেটের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ স্থূলতার শিকার হবে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে ২১ কোটি ৮০ লক্ষ পুরুষ এবং ২৩ কোটি ১০ লক্ষ মহিলা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায় হতে পারেন।
গবেষণার মূল তথ্য
গবেষকরা ১৯৯০ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে ভারতে বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্থূলতার হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণদের মধ্যে স্থূলতা: ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে স্থূলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তরুণ পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪০ লক্ষ, যা ২০২১ সালে বেড়ে ১.৬৮ কোটিতে পৌঁছেছে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ২.২৭ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।
তরুণীদের মধ্যে ১৯৯০ সালে ৩.৩ মিলিয়ন অতিরিক্ত ওজন বা স্থূল ছিল, যা ২০২১ সালে ১.৩ কোটিতে পৌঁছেছে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এটি ১.৬৯ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। ২০২১ সালে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায় তরুণদের সংখ্যা ভারতে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশি ছিল।
আরও পড়ুন:- হাইট অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত? তালিকাটা দেখে নিন…
বিশ্বব্যাপী স্থূলতার চিত্র
বিশ্বজুড়ে ২০৫০ সালের মধ্যে ২৫ বছরের বেশি বয়সী ৩.৮০ বিলিয়ন মানুষ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার শিকার হবেন, যার মধ্যে ১.৯৫ বিলিয়ন হবে স্থূলকায়। চীন (৬২.৭ কোটি), ভারত (৪৫ কোটি) এবং যুক্তরাষ্ট্র (২১.৪ কোটি) স্থূলতার সংখ্যায় শীর্ষ তিনটি দেশ হতে পারে।
স্থূলতার মূল কারণ
গবেষকরা মনে করছেন যে স্থূলতা বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ভারতে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত এবং অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বেড়েছে।
ফাস্টফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের প্রসার: বহুজাতিক খাদ্য ও পানীয় কর্পোরেশনগুলোর বিনিয়োগ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হওয়ায় ভারতে ফাস্টফুডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
অলস জীবনযাত্রা: আধুনিক জীবনধারার পরিবর্তনের ফলে শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাস পেয়েছে।
খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি: স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফলমূল ও প্রোটিনজাতীয় খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে নিম্ন আয়ের মানুষজন বেশি কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের উপর নির্ভর করছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থূলতা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ সুকৃতি ভাল্লা বলেন, “ভারতে মানুষ আগের তুলনায় এখন আরও কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়ছে। স্থূলতা ধমনীতে বাধা সৃষ্টি করে এবং শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”
শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুনীতা শর্মা বলেন, “শিশুরা চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।”
এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডাঃ সন্দীপ খার্ব বলেন, “গ্রামাঞ্চলেও স্থূলতা বাড়ছে, কারণ নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো প্রধানত চাল ও গমের মতো বেশি কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাদ্যের উপর নির্ভরশীল।”
স্থূলতা মোকাবিলায় করণীয়
গবেষকরা মনে করেন, স্থূলতা রোধে শুধু ওষুধ বা চিকিৎসা নয়, সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।
সুষম খাদ্য গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
শিশুদের অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের অভ্যাস থেকে দূরে রাখতে হবে।
স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সরকারি নীতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত খাবারের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:- সুখবর ! সরাসরি ইন্টারভিউর মাধ্যমে স্টেট ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! শীঘ্রই আবেদন করুন
আরও পড়ুন:- সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে ব্রেকফাস্টে রাখুন এই খাদ্য তালিকা