Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ক্ষমতায় আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জিতে আসা বিধায়কদের ‘চ্যাংদোলা’ করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলার দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিধায়কের এমন মন্তব্যে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। এর প্রেক্ষিতে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর হুমকি দিয়ে বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার না করলে ৪২ জন সংখ্যালঘু বিধায়ক বিরোধী দলনেতাকে বুঝে নেবেন। তাঁর হুঁশিয়ারি শুভেন্দু অধিকারীকে মুর্শিদাবাদে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ঢুকতে চাইলে বুঝিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের কত ক্ষমতা। হুমায়ুন বলেছেন, ‘উনি আছাড় মারবেন বলেছেন, আমি ঠুসে দেব।’ পাল্টা হুমায়ুন কবীরকে আক্রমণ করেছেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তৃণমূল বিধায়ককে বক্তব্য প্রত্যাহারের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শঙ্কর। এককথায় শাসক-বিরোধীর ভাষার লড়াই দেখছে বঙ্গ রাজনীতি।
মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সরকারকে নিশানা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘তৃণমূল বাংলার হিন্দু জনগণকে উপড়ে ফেলতে চাইছে। ওদের দলের যে সব মুসলিম বিধায়ক জিতে আসবে তাদের চ্যাংদোলা করে ১০ মাস পরে এই রাস্তায় ফেলব।’ এই মন্তব্যের পরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বঙ্গ রাজনীতি। বুধবার সেই মন্তব্যের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবে তেতে ওঠে বিধানসভা। শুভেন্দুর নাম না করে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে নিজের বক্তব্যের জন্য ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শুভেন্দুকে ক্ষমা চাওয়ার হুমকিও দেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন বলেন, ‘উনি যদি মারতে আসেন তাহলে আমরা কি রসগোল্লা খাওয়াবো নাকি? মুসলিম বিধায়কদের তিনি অসম্মান করবেন, আছাড় মেরে রাস্তায় ফেলার কথা বলবেন, আর তাঁকে রসগোল্লা খাওয়াবো না। যা জবাব দেওয়ার তাই দেওয়া হবে। উনি আছাড় মারার কথা বলেছেন, আমি ঠুসে দেব।’ তৃণমূল বিধায়কের আরও বক্তব্য, ‘আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শুভেন্দু অধিকারী যদি নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার করে মুসলিম বিধায়কদের কাছে ক্ষমা না চান, তাহলে বিধানসভায় তাঁর ঘরের বাইরে গিয়ে বুঝে নেওয়া হবে। আমার নেতৃত্বে ৪২ জন মুসলিম বিধায়কদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে শুভেন্দুকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী শুধু মেদিনীপুর বা কলকাতার নন, গোটা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তিনি। তিনি কত বড় মাতব্বর হয়েছেন দেখে নেব। মুর্শিদাবাদে তাঁকে ঢুকতে দেব না।’ এদিকে তৃণমূলের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চোধুরী হুঁশিয়ারী দিয়েছেন বিরোধী দলনেতার ঢ্যাং ভেঙে দেওয়ার।
আরও পড়ুন:- আধার কার্ড হারিয়ে গেলে কি করতে হবে? নতুন আধার কার্ড কিভাবে পাবেন? জেনে নিন
যদিও যে কোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু। কিন্তু হুমায়ুন কবীরের হুমকির পরই নিজের বিধানসভার ভেতরে দলীয় বিধায়ক এবং নিজের জন্য উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে বিধানসভার সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। তবে শুভেন্দু বিধানসভায় নিরাপত্তা চাইতেই তিনি ভয় পেয়েছেন বলে কটাক্ষ করেছেন হুমায়ুন। ‘যার দম নেই সে একথা বলে কেন? গোটা সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে কেন?’, এদিন বলেছেন হুমায়ুন।
এদিকে হুমায়ুনের বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিজেপি। হুমায়ুন-সিদ্দিকুল্লাদের মন্তব্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারও বিধানসভায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়। হুমায়ুন কবীর এবং সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। অধ্যক্ষ আলোচনায় সম্মতি না দেওয়ায় বিধানসভা কক্ষ ওয়াকআউট করে বেরিয়ে এসে বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপির বিধায়করা। পরে বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে শঙ্কর ঘোষ বলেন, এরাজ্যে রাজনীতিতে ধর্মের প্রবেশ ঘটিয়েছে তৃণমূল। সিপিএম এরাজ্যে তৃণমূলের বি টিম। পাশাপাশি হুমায়ুন কবীরের ঠুসে দেওয়ার মন্তব্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পত্যাহারের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ বলেন, ‘গতকাল বিধানসভায় সংখ্যালঘু ভোটের তুষ্টিকরণ করতে গিয়ে উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভেবেছিলেন ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাব। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন যে আমার তোলা অভিযোগ খানিকাংশে সঠিক। তুষ্টিকরণের রাজনীতি বন্ধ হোক। কোনও অবস্থায় হিন্দুদের জীবন বিপন্ন করা যাবে না। এই মুহূর্তে হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকে বলা হচ্ছে ‘ঠুসে দেব, ঠ্যাং ভেঙে দেব’। এই মুহূর্তে এ রাজ্যে হিন্দু-মুসলিম ইস্যুটি একটি বড় ইস্যু বলে মনে করে বিজেপি।’
এদিকে হুমায়ুন কবীর নিজের বক্তব্যে অনড় রয়েছেন। আজও শুভেন্দুকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে তৃণমূলের এই সংখ্যালঘু বিধায়ক বলেছেন, ‘ঠুসে দেওয়ার কথা শুনেই ভয় পেয়ে গেছে। অধ্যক্ষের সচিবালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য চিঠি দিচ্ছে। যার দম নেই সে এই কথা বলে কেন? গোটা সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে কেন? সবাইতো এখনও মুখ খোলেনি। আমি একা মুখ খুলেছি। খুন করা হতে পারে বলছে, আমরা কি এখানে খুন করতে আসি। আমাকে বলছে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, আমিও বলছি ঠুসে দেব।’ বঙ্গ রাজনীতিতে এখন শাসক ও বিরোধী শিবিরে ‘চ্যাংদোলা’, ‘ঠুসে দেওয়া’, ‘ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার’র মত শব্দের প্রাধান্য। কৃষ্টি সংস্কৃতির এই বাংলায় এখন এক অন্য রাজনীতি দেখা যাচ্ছে। এই চর্চা এখন কোন খাতে মোড় নেয় সেটাই দেখার।